শুক্রবার, ২১ মে, ২০১০

শেকড়ের সন্ধানে

পঁয়ত্রিশ বছর পর গ্রামে গেলাম পুরো দিন থাকার নিয়তে নীচে পাকা উপরে টিন তিন রুমের একটি ঘর 1975 সালে শহরে চলে আসার পর হতে যতবারই গ্রামের গিয়েছি চাচাদের ঘরে উঠেছি, বেশীর বেশী এক বেলা থেকেছি আমরা নয় ভাই-বোনদের কেউই গ্রামের থাকে না কোনও খবরও রাখে না মাঝে মাঝে, বিশেষ করে ঈদের দিন বা পরের দিন বাবার কবর যেয়ারত করার জন্য্ গাড়ীতে করে যেয়ে আবার গাড়ীতে করে ফিরে আসে আমাদের জমি যারা চাষ করে তাঁদেরকে আমরা কেউই চিনে না এমনকি আমাদের পৈতৃক জমিগুলোর অবস্থান কোথায়, আমাদের ভাই-বোনেরা বলতে পারবে না আমিও না গ্রামের বাড়ী হতে মাত্র চৌদ্দ মাইলের মধ্যে চট্ট্গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরী করি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসায় থাকি ভাবলাম গ্রামে যাবো

গেলাম কারো ঘরে উঠলাম না সংগে দুপুরের খাবার নিয়ে গেলাম সারাদিন ঘরে ছিলাম জুমার পরে আব্বার কবর যেয়ারত করে সোজা ঘরে চলে আসলাম মজার ব্যাপার হলো ঘরে কাঠের জিনিস প্রায় সবই ঘুণে ধরে বরবাদ হয়ে গেছে অনেক কষ্টে জানালা খুললাম খুলতে গিয়ে কয়েকটি পড়ে যাবার উপক্রম হলো আসার সময় দেখি আর বন্ধ করা যাচ্ছে না খাট-চৌকিগুলো নাড়াতে গেলেই ভেঙ্গে পড়ে যাবার অবস্থা আলমারী গুলোর তাকগুলো সব ঝুরঝুরে হয়ে গেছে বৃষ্টি শুরু হতেই দেখা গেল এখানে সেখানে বৃষ্টি চুইয়ে পড়ছে এক জায়গায় টিনের ফাঁকে আকাশ দেখা যাচ্ছে মাত্র দুটি হোল্ডারে বাল্ব লাগানো গেলো ফ্যান নাই একটিও বৃষ্টির মধ্যেও ভ্যাপসা গরম দুটি মশারী দেখলাম ইদুর-তেলাপোকায় কেটে কিচ্ছু রাখে নাই একমাত্র টয়লেটের তালাটি অনেক কষ্টে খুললেও দরজা খুলছে না কতটুকু খোলার পরে দেখা গেল আর বন্ধ করা যাচ্ছে না কিছু ক্রোকরীজ আছে একটি পিতলের বদনা কেউ জানি দরাপরবশ হয়ে চুরি না করে রেখে দিয়েছে সেগুলো দেখে ছোট বেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেল

আমরা ভাইবোনেরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত, তথাকথিত এলিট এই হলো আমাদের গ্রামের বাড়ীর অবস্থা অবশ্য শহরে আমাদের বিল্ডিং আছে সেখানে আমরা একসাথে ঈদ করি

ভাবছি প্রতি সপ্তাহে বাড়ী যাব ক্রমে ক্রমে সব ঠিকঠাক করে স্ত্রীসহ সন্তানদেরকে নিয়ে থাকব যাতে তাঁরা গ্রামের আত্মীয়-প্রতিবেশীদের সাথে পরিচিত ও ঘনিষ্ট হওয়ার সুযোগ পায়

1 টি মন্তব্য:

  1. দৃশ্যের জীবনে অলৌকিক প্রেরণা

    কে যেন এসে অদৃশ্য বিধান রেখে গেলো দৃশ্যের জীবনে
    আমার হাতের ভাঁজে তেল নুনের গন্ধ
    কখন যে বদলে গিয়ে ভিনদেশী লোবানে।
    আমি কখনো তাকে ডাকেনি,
    সে নিত্য আমার খাইয়েসের তজ্জ্বলীতে
    একটু একটু করে আমার হয়ে গেছে।

    আমি অচীন হয়ে গেছি
    কাঠাল চাপার গন্ধে নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে
    চন্দ্র মল্লিকার বনে আর কোকিল ডাকে না।

    আমার কাছে নাই হয়ে গেছে স্বর্গীয় অনুপ্রেরণা
    নাই পিতামহের অস্তিত্ত্বের ইতিহাস।
    কেউ আমার জন্য একটুকরো মেঘ রেখে যায়নি-
    এই যেন ইতিহাসবিহীন নিস্তরঙ্গ পাথর শহর।
    আমার অদৃশ্য শাশ্বত শহর
    অন্ধ মানুষে ভরে গেছে।

    এখন আর মায়ের হাতের ঝাঁঝ লাগে না নাকে-
    আমি নতুন করে গন্ধবণিকের বাড়ী খুঁজি,
    এ গলি ও গলি, অন্ধ কাঠঠোকরা এক।
    কেউ সে ঠিকানা জানে না।

    আমি নিজের একাকীত্বে কখনো কখনো
    শুনতে পাই দৃশ্যের অতীত অলৌকিক বাণী।
    সে যেন আমার নিজের মাঝে নিজেকে খুড়তে থাকে -
    আমি চোখ মুদি, কানে হাত চাপা দিই।

    কিছুই তার গোপন থাকে না-
    ক্ষণে ক্ষণে যেন নিজেকে অতিক্রম করে আরশের ছায়ায় আশ্রয় নেয়।

    উত্তরমুছুন