শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০১০

logic আর faith এর পার্থক্য কি সবসময় স্পষ্ট ?

logic আর faith এর পার্থক্য কি সবসময় স্পষ্ট ? যেমন ধরুন বিজ্ঞানের রানী অংক শাস্ত্রকে যার মধ্যে জ্যামিতি হলো সবচেয়ে যুক্তি নির্ভর। জ্যামিতির শুরু হয় কতগুলি স্বতসিদ্ধ দিয়ে যেমন -
বিন্দু - এমন যার দৈর্ঘ ,প্রস্থ কিছুই নেই কেবল অবস্থান আছে। কিন্তু বাস্তবে এমন কোন ‘কিছু’ খুজে পাওয়া যাবেনা যার কেবল অবস্থানা আছে কিন্তু দৈর্ঘ ও প্রস্থ নেই। রেখা এমন যার কেবল দৈর্ঘ আছে প্রস্থ নেই কিন্তু বাস্তবে এমন কোন রেখা নেই যার প্রস্থ নেই। কিন্তু জ্যামিতি পড়তে হলে আমাদের বিশ্বাস করে নিতে হয় বিন্দু আর রেখার সংঙাকে কারন জ্যামিতের সমস্ত logic বিন্দু, রেখা ইত্যাদির উপর প্রতিষ্ঠিত।

এভাবে অনেক ক্ষেত্রে logic এর শুরু হয় বিশ্বাস থেকে (axiomatic or Godly in a sense though axioms are not God in the religious sense, but Godly, i.e., axioms are self-justified.)।

একই ভাবে গনিতে শুন্য ও অসিমের ধারনা কল্পনাপ্রসুত অথচ বিজ্ঞানের সৌধ দাঁড়িয়ে আছে এই কল্পনার উপর বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে

যাক, এই পোস্টের মূল বক্তব্য হলো - বিশ্বাস কে আমরা সাধারণতঃ মনে করি শুধুই বিশ্বাস হিসাবে। হাইপোথিসিস বা প্রকল্প হলো অনুমান যার ভিত্তিতে পরীক্ষণ সম্পন্ন করা হয়। অনেক বছর আগে প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আমি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম। ফলাফলও ভাল ছিল। বর্তমানে আমি দর্শনের ছাত্র। আমার আগ্রহের বিষয় হলো সমকালীন জ্ঞানতত্ত্ব। আমাদের দেশে হাতেগোণা দু’চার জন এ বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা করেছে। আমাদের প্রচলিত অনেক ধারনা জ্ঞানতত্ত্বে এসে পরিবর্তন হয়ে যায়। এ কথা সত্যি যে আমরা কিছু ধরে নিয়ে সেটির ভিত্তিতে অর্থাৎ সেটিকে অভ্রান্ত ধরে নিয়ে অন্যগুলোকে যাচাই করি। তবে যেটিকে আমরা প্রথমেই (যাচাইকরণ ব্যতিরেকে) গ্রহন করি সেটিকে পরবর্তীতে আমরা আবার পূণঃমূল্যায়ন করতে পারি। দুটো প্রধান তত্বকে ঘিরে এই আলোচনা: ফাউন্ডেশানালিজম ও কোহারেন্টিজম।

গণিতের এক সহকর্মী বিন্দু, রেখা, অসীম, কাল্পনিক সংখ্যা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। সে অনুসারে এই পোষ্ট।

জ্ঞানতত্ত্বে সবই বিশ্বাস, কিছু বিশ্বাস শুধুই বিশ্বাস, কিছু বিশ্বাস যাচাইকৃত ও সত্য। শুধুমাত্র সে সব বিশ্বাসই জ্ঞান পদবাচ্য যা যাচাইকৃত ও সত্য। এ অর্থে আমাদের ইন্দ্রিয়জ জ্ঞানসমূহও মূলতঃ (ইন্দ্রিয়জ) বিশ্বাস। আমার চোখ এই স্ক্রিণকে সাদা দেখাচ্ছে বলে আমি বলছি এটিকে আমি সাদা দেখছি; বা বলছি, এটি সাদা। এক্ষেত্রে আমি, জ্ঞানের কর্তা ও এই স্ক্রীণ, জ্ঞানের বিষয় - এর মাঝখানে আমার ইন্দ্রিয়জ প্রক্রিয়া, এক্ষেত্রে দৃষ্টি-প্রক্রিয়া, ক্রিয়াশীল। এই সম্পর্কটি মাঝখানে দৃষ্টি-প্রক্রিয়া থাকায় একটি অ-প্রত্যক্ষ সম্পর্ক। প্রত্যক্ষ সম্পর্ক হলো আমার সত্ত্বা বা আমি ও আমার দৃষ্টি-প্রক্রিয়া তথা চোখের মধ্যকার সম্পর্ক। আমি যৌিক্তকভাবে বিশ্বাস করি যে, আমার ইন্দ্রিয়সমূহ আমাকে ‘বাস্তব জগত’ সম্পর্কে ‘সত্যিকারভাবে’ সাক্ষ্য দেয় বা বলে যদিও আমার এ বিশ্বাসের ইন্দ্রিয়-অতিরিক্ত কোন প্রমাণ আমার নাই, স্বজ্ঞা যাকে আমরা সাধারনতঃ বলি, কান্ডজ্ঞান ব্যতিরেকে। এজন্য কমনসেন্স বিরোধী কোনকিছুকে বলা হয় কাউন্টার-ইনট্যুইটিভ। দেখুন, কিভাবে আমরা সেন্স-পারসেপশান হতে ইনট্যুইশানে এসে পড়লাম।

আমার এ কথাগুলো আপনাদের কাছে বিদঘুটে লাগাটা স্বাভাবিক। সেদিন ‘মাপকাঠির মাপ কী’ - এই পোস্টে একজন বলল আমরা ফুটকে ইঞ্চি দিয়ে মাপি, ইঞ্চিকে আরো ছোন এককে মাপি, ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনি অত্যন্ত সহজ একটা কথা স্বীকার করতে দ্বীধা করলেন যে, আসলে সব কিছুর মাপ হয়না, অন্ততঃ মাপকাঠির মাপ হয়না। না হওয়াটাই স্বাভাবিক তথা যুক্তি সংগত।

যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীরা বলেছিলেন, অর্থপূর্ণ হতে হলে সব বচনের যাচাইযোগ্যতা তথা পরীক্ষণের উপায় থাকতে হবে। সুতরাং যে কথার কোন বাস্তব পরীক্ষণ সম্ভব নয় তা অর্থপূর্ণ নয়। আর অর্থপূর্ণ না হলে তা সত্য বা মিথ্যা হওয়ার আর কোন অবকাশ থাকেনা। সুতরাং সেটি পরিত্যাজ্য তথা অর্থহীন, আবেগের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। লজিক্যাল পজিটিভিষ্টদের এই দাবীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত চোখা চোখা সব যুক্তির আলোচনাতে ব্লগের পরিবেশ ভারাক্রান্ত না করে বোদ্ধা পাঠকের জন্য শুধু এটুকু বলা যথেষ্ট হবে যে, সবকিছু পরীক্ষণের আওতায় আসতে হবে - এই বাক্যের পরীক্ষণ কি? নাই। এই বাক্যকে মূলনীতি হিসাবে ধরে নিয়েই সব কিছুকে পরীক্ষণের প্রয়াস গ্রহন করা হয়।

বলা হয়, কোন অজানা সংখ্যাকে এক্স ধরে সমীকরণ করলে অজানা সংখ্যাটি সত্যি সত্যি বা বাস্তবিকই এক্স হয়ে যায় না। কথা ঠিক। কিন্তু যদি প্রাপ্ত ফলাফল এটিকে এক্স বলতে আপনাকে বাধ্য করে, অজানা সংখ্যাটিকে যদি ওয়াই ধরা হলে যদি সমীকরণ না মেলে? তথন নিশ্চয়ই আপনি ফলাফলে প্রাপ্ত এক্সকে ওয়াই বলবেন না । অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা প্রদত্ত বা আরোপিত নামকে বদল করে দিতে পারি যদি তা প্রাপ্ত ফলাফলের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। কোনকিছুর মান যদি হয় ৫ আর এক্স-এর মান ৫ আর ওয়াই-এর মান ২ হয় তাহলে আপনি অজানা সেই কোনকিছুকে কতক্ষণ এক্স আর কতক্ষণ ওয়াই বলতে পারবেন না। এর মোটিভ হচ্ছে বিশ্বাস-এর সাথে যুক্তি ও প্রমাণ -এর সম্পর্ক নির্ণয় করা। বিশ্বাস হতে যুক্তি ও প্রমান অবশ্যই আলাদা বটে কিন্তু বিশ্বাস হলো ভিত্তি ও পরিণতি।

ধারা্টা এমন: প্রাথমিক বিশ্বাস - হতে অনুমান। অনুমানের পক্ষেবিপক্ষে যুক্তি নির্মাণ। যুক্তিরভিত্তিতে - তত্ত্বগত প্রমান-প্রয়াস। প্রমাননির্ভর বিশ্বাস = জ্ঞান। উল্লেখ্য যে, কোন জ্ঞানই নীতিগতভাবে বা স্বয়ং অপরিবর্তনীয় নয়। যে ‘জ্ঞান’এ বিশ্বাস নাই, জ্ঞানতত্ত্ব মোতাবেক তা আদৌ জ্ঞান হিসাবে গণ্য হতে পারে না।

আমরা যা কিছু দেখি তা জ্ঞান নয়, যা কিছুর ভিত্তিতে দেখি ও দেখে যা কিছু মনে করি - জ্ঞান হলো সেসব কিছুর সমষ্টি

মনে করুন একটি বৃত্ত যেটি বিশ্বাসে পূর্ণ। এর মধ্যে আর একটি উপবৃত্ত যা হলো সত্যতায় পূর্ণ। এটির মধ্যে আরও একটি ক্ষুদ্রতর বৃত্ত যা হলো যতটুকু যাচাই করে পাওয়া গেছে তার সমষ্টি। এক্ষণে, অন্তস্থঃ এই দুই উপবৃ্ত্ত নিয়ে যে মুল বৃত্ত তা-ই হলো জ্ঞান। অতএব আপনার বিশ্বাসের পরিধি যতটা বাড়াবেন কমাবেন সে অনুযায়ী আপনার জ্ঞান ভিন্ন ভিন্ন হবে। অথচ সবসময়েই সত্যতা অভিন্ন আর যাচাই প্রায়-অভিন্ন থেকে যায়। এটি হ লো JTB = K - এর ব্যাখ্যা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন