শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১১

ইসলাম কত প্রকার? অন্ততঃ ৫ প্রকারের। আপনি কোন্ ক্যটাগরীতে?

ইসলাম এক ও অভিন্ন প্রকারের। তবে সেটি হলো তাত্ত্বিক ইসলাম। যা রেখে গেছেন প্রফেট মুহাম্মদ (সঃ), অনুসরণ করেছেন সাহাবীগণ প্রমুখ। সমাজে, বাস্তবে ইসলাম আছে ৫ প্রকারের। বলা যায়, লোক ইসলাম ৫ ধরনের। দেখুন আপনি একমত হতে পারেন কি নাঃ

১. ইসলাম লায়াবিলিটি হিসাবে।

২. ইসলাম ঐতিহ্য হিসাবে।

৩. ইসলাম পেশা হিসাবে।

৪. ইসলাম পরিচিতি হিসাবে।

৫. ইসলাম পছন্দ হিসাবে।

১. ইসলাম লায়াবিলিটি হিসাবে – তাঁদের কাছে যারা জীবনের একসময়ে মাদ্রাসায় পড়েছেন, বা ইসলামী সংগঠন করেছেন বা যাদের পরিবারে ইসলাম চর্চা হয় বা হতো; কিন্তু এখন তাঁরা সর্বোতভাবে চেষ্টা করেন যাতে লোকে জানতে না পারে যে উনার একটা ইসলামী অতীত বা ব্যকগ্রাউন্ড আছে। অতীতের ইসলাম পরিচিতিকে লুকানোর জন্য কখনো কখনো এরা ইসলামপন্থীদের উপর খড়গ-হস্তও হয়ে থাকেন।

২. ইসলাম ঐতিহ্য হিসাবে – তাঁদের কাছে যারা একসময়ে মাদ্রাসায় পড়েছেন বা পরিবারে ইসলাম চর্চা হয় বা হতো; সে হিসাবে এখনও নামাজ পড়েন, পর্দা করেন; যতটুকু সম্ভব ইসলামী অনুশাসন অনুশীলন করেন। তবে, নিজের স্বার্থকে একেবারে জলাঞ্জলি দিয়ে নয়। ইনাদের চিন্তা-ভাবনায় যে ইসলাম সেটি নিতান্তই ব্যক্তিগত। ইসলামের জন্য প্রয়োজনে জীবনও দিয়ে দিব – ইনাদের মাথায় এটি কখনো আসেনা। ইনাদের ইসলাম, বলা যায়, মুসলিম লীগ মার্কা ইসলাম।

৩. ইসলাম পেশা হিসাবে – তাঁদের কাছে যারা ইসলাম-এর চাকুরী করেন। যেমন- মাদ্রাসার হুজুরেরা, পীর ও তদীয় খাদেমগণ, মসজিদের বেতন-ভূক ইমাম সাহেবানরা, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী বিষয়াদির শিক্ষকগণ ও ইসলামী সংগঠনের ফুল-টাইমার / সুবিধাভোগী দায়িত্বশীলগণ। প্রচলিত আছে, ইমামতির চাকুরী না করলে অনেক হুজুর পাঁচ বেলা মসজিদেও যেত না।

ইনারা নিজেদেরকে ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া দাবী করেন। কিন্তু মনে করেন, এটি পাবলিকের দায়িত্ব, তাঁদের কাছে আসা, ইসলাম ‍বুঝে নেয়া। নবীরা মানুষের কাছে যেতেন এবং পারিশ্রমিক না নেয়ার বিষয়টিকে তাঁদের বক্তব্যের পক্ষে দাবী হিসাবে লোকদের বলতেন। [বিঃদ্রঃ শিক্ষাদানের মাধ্যমে পারিশ্রমিক গ্রহন বৈধ হলেও দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার জন্য কোন প্রকারের বৈষয়িক বিনিময় গ্রহন সম্পূর্ণ অবৈধ।]

এসব পেশাধারী ইসলামপন্থীরা নিজেদের জন্য রুখসত (জায়েযের সর্বনিম্ন সীমা) অবলম্বন করলেও ওয়াজ করার সময় বা হেদায়াতী বক্তব্য রাখার সময় অত্যন্ত কঠোরভাবে (নাকি নির্লজ্জভাবে?) আযীমতের (সর্বোচ্চ মান) বয়ান করেন।

৪. ইসলাম পরিচিতি হিসাবে – তাঁদের কাছে যারা মূলত অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে থাকেন। ইসলাম তাঁদের সোশ্যাল আইডেন্টিটি। এরা প্রায়শঃই এপলোজেটিক হয়ে থাকেন। পরবর্তীকালে এরা ইসলাম পছন্দ ক্যটাগরীতে উন্নীত হন – এমন নজীর বিদ্যমান।

৫. ইসলাম পছন্দ হিসাবে আছেন তাঁরা যারা ইসলামকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আদর্শ হিসাবে মেনে চলেন। এরা ইসলাম বুঝেন, যথাসম্ভব মানেন। এই দলের লোক আবার তিন ধরনের। চরমপন্থী, নন-অফেনসিভ চরমপন্থী ও মধ্যপন্থী।

ক. ইসলাম তাঁদের চয়েস অথচ চরমপন্থী হচ্ছেন তাঁরা যারা বোমা মেরে প্রচলিত আদালতের বিচারকদের হত্যা করতে চান, এজন্য যে, এসব বিচারক আল্লাহর আইন অনুযায়ী ফয়সালা করেন না, যেখানে আল্লাহর বাণী হলো – যারা ইসলামের বিধান ব্যতিরেকে বিচার-ফয়সালা করেন তাঁরা কাফির …. । আক্বীদাগত দিক থেকে এরা ইসলাম বুঝলেও বিদ্যমান সমাজে ইসলামের বাস্তবায়নের ব্যাপারে এরা অত্যন্ত দূর্বল জ্ঞান রাখেন। এরা যে কোন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সুকুমারবৃত্তি চর্চাকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন।

খ. এরা কখনো নন-অফেনসিভ এক্ট্রিমিষ্টও থাকেন। ইসলামের শুধুমাত্র লোকপ্রিয় (মূলতঃ ধর্মীয়) দিকগুলো, যেমন স্পিরিচুয়ালিটি ইত্যাদি নিয়ে এরা থাকেন। এরা ইসলামিক পিউরিটানিজমে ভোগেন। ইসলাম পছন্দ চরমপন্থী ও মধ্যপন্থীদেরকে এরা সরাসরি অন্যতম বাতেল মনে করেন। এরাও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে অনুৎসাহিত করেন। ইনারা আমলবাদী।

গ. ইসলাম পছন্দ দলের মধ্যকার মধ্যপন্থী হচ্ছেন তাঁরা যারা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিধানাবলীকে সামাজিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন করে ইসলামের বিধানাবলী সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। ইনারা ইসলামী আন্দোলনের লোক। নারীদের ব্যাপারে এরা উদার মনোভাবাপন্ন, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সুকুমার চর্চাকে এরা জরুরী মনে করেন। সোশ্যাল মেচুরিটি – এদের যে কোন পলিসির মাপকাঠি হিসাবে কাজ করে। সমাজের সকল স্তর হতে লোকজন নিয়ে এই ক্যটাগরী।


আসুন এবার আত্মপর্যালোচনা করে দেখি আমি/আপণি কোন্ দলে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন